গ্রীষ্মকাল মানেই কাঠফাটা রোদ আর প্যাচপ্যাচে গরম, কিন্তু বাঙালির কাছে গ্রীষ্ম মানে কাঁচা আমের টক গন্ধ আর ছেলেবেলার হাজারো স্মৃতি। আর সেই কাঁচা আমের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে জিভে জল আনা মজাদার আচারের কথা। কাঁচা আমের আচার শুধু একটি খাবার নয়, এটি আমাদের শৈশব, পরিবারের ভালোবাসা আর ঐতিহ্যের এক দারুণ মিশ্রণ।
শুধু স্বাদ নয়, এ এক উৎসব
প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে বাংলার ঘরে ঘরে যেন আমের আচার বানানোর উৎসব শুরু হয়ে যায়। দাদি-নানিদের তত্ত্বাবধানে বাড়ির ছাদে বা উঠোনে সারি সারি করে রাখা কাঁচা আমের ফালি শুকানোর দৃশ্য আজও অনেকের চোখে ভাসে। সেই আমে হলুদ-লবণ মাখানো, তারপর যত্ন করে মশলা মিশিয়ে তেলে ডুবিয়ে বয়ামে ভরা—পুরো প্রক্রিয়াটিই যেন এক আনন্দময় পারিবারিক আয়োজন।
স্বাদের নানা রকমফের
আমের আচার মানেই যে শুধু টক আর ঝাল, তা কিন্তু নয়। এর স্বাদের রয়েছে নানা বৈচিত্র্য:
মিষ্টি আচার বা মোরব্বা: কাঁচা আমের টুকরো চিনির সিরায় ডুবিয়ে তৈরি হয় এই লোভনীয় আচার, যা রুটি বা পরোটার সাথে খেতে অসাধারণ লাগে।
ঝাল তেল আচার: সরিষার তেল, পাঁচফোড়ন আর শুকনো মরিচের ঝাঁঝে তৈরি এই আচারটি খিচুড়ির সাথে বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় অনুষঙ্গ।
কাসুন্দি আচার: আমের সাথে কাসুন্দির ঝাঁঝালো স্বাদ মিশে এক নতুন মাত্রা যোগ করে, যা গরম ভাতের সাথে অমৃত সমান।
ঝুরি আচার: আম চিকন করে কেটে (ঝুরি করে) শুকিয়ে বানানো এই আচারটি ডালের সাথে মেখে খেতে খুবই মজা।
স্মৃতির বয়াম
আমের আচার শুধু স্বাদের জন্যই নয়, এটি আমাদের আবেগের সাথেও জড়িত। বয়ামে ভরা প্রতিটি আচারের টুকরো যেন একেকটি গল্প বলে—মায়ের হাতের যত্ন, দাদির স্নেহ আর গ্রীষ্মের ছুটির অলস দুপুরের স্মৃতি। আজকের ব্যস্ত জীবনে হয়তো অনেকেরই ঘরে আচার বানানোর সুযোগ হয় না, কিন্তু বিভিন্ন অনলাইন শপ আর স্থানীয় বিক্রেতারা সেই ঘরোয়া স্বাদ পৌঁছে দিচ্ছেন আমাদের দোরগোড়ায়।
শেষ কথা
আমের আচার বাঙালির সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি স্বাদে যেমন অতুলনীয়, তেমনই এর সাথে জড়িয়ে থাকা স্মৃতিগুলো অমূল্য। তাই খাবারের পাতে একটুখানি আমের আচার মানে শুধু স্বাদ বৃদ্ধি নয়, এক টুকরো শৈশবকে ফিরে পাওয়া।